Uncategorized

মায়ের ভালোবাসার চেয়ে পৃথিবীতে বিশুদ্ধ আর কিছু নেই : অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

হলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ও পরিচালক অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মায়ের নাম মার্শেলিন বারট্র্যান্ড। ২০০৭ সালে ক্যানসারে ভুগে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মারা যান জোলির মা। মায়ের মৃত্যু ভীষণ প্রভাব ফেলে এই অভিনেত্রীর জীবনে। এখন জোলিও ৬ সন্তানের জননী। ২০২০ সালে মহামারিকালে মা দিবস উপলক্ষে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি বিশেষ কলাম লেখেন জোলি। তাতে উঠে আসে তাঁর মা, শৈশব আর মাতৃত্বের কথা।

যাঁদের মা এই পৃথিবীতে নেই, তাঁদের জন্য মা দিবস খুবই কঠিন একটা দিন। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর তো অনেকের জন্যই এ দিনটি আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে অনেকেই হারিয়েছেন মা-বাবাকে, শেষ সময়ে তাঁদের পাশে থাকতে পারেননি। যেভাবে ভালোবেসে মা-বাবাকে আগলে রাখতে চেয়েছিলেন, তার কিছুই হয়ে ওঠেনি।আমার বয়স যখন ত্রিশের ঘরে, তখন আমি মাকে হারাই। এখনো ওই সময়ের দিকে তাকালে উপলব্ধি করি, তাঁর মৃত্যু আমাকে কতটা বদলে দিয়েছে। তাঁর চলে যাওয়াটা হুট করে হয়নি। কিন্তু তাতে আমার ভেতরটা হুট করে ফাঁকা হয়ে গেছে। মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা, আর আদরের স্পর্শ হারিয়ে মনে হচ্ছিল, কেউ যেন আমাকে আগলে রাখা নরম, উষ্ণ চাদরটা কেড়ে নিয়ে গেল।মা মারা যাওয়ার পর আমি ডান হাতে একটা ছোট্ট ট্যাটু করিয়েছিলাম। জানতাম, হাতে ট্যাটু করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ঝাপসা হয়ে যায়। সবাই দেখে ভাবে, আমি বুঝি হাতে ‘এম’ লিখেছি। কিন্তু এটা আমার মা মার্শেলিনের নামের ‘এম’ নয়। এটা আসলে ‘উইন্টার’-এর ‘ডব্লিউ’। এটা রোলিং স্টোনসের একটা গান, যেটা ছেলেবেলায় মা আমাকে প্রায়ই গেয়ে শোনাতেন। আমার শৈশবের খুবই প্রিয় স্মৃতি এটা। ‘ইট শিওর বিন আ কোল্ড কোল্ড উইন্টার’ (খুব খুব শীত হবে নিশ্চিত), সে গাইত। আর ‘আই ওয়ানা র‌্যাপ মাই কোট অ্যারাউন্ড ইউ’ (আমার চাদরে তোমাকে জড়িয়ে রাখতে চাই)। লাইনটা যখন গাইত, তখন মা আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করত।আমি মাকে খুব ভালোবাসতাম। শিকাগোর দক্ষিণাঞ্চলের এক ক্যাথলিক পরিবারে তার জন্ম। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করত। প্রাণ খুলে হাসত। আমি বিষণ্ন থাকলে, মন খারাপ করে রাখলে, মা আমার সামনে এসে রক গান গাইতে শুরু করত। গেয়ে গেয়ে আমাকে মনে করিয়ে দিত, আমার ভেতরে জ্বলে ওঠার কত কত সম্ভাবনা আছে।

মায়ের সঙ্গে ছোটবেলার কয়েকটা স্মৃতি এখনো খুব জীবন্ত মনে হয়। মনে পড়ে, যেদিন জন লেননকে মেরে ফেলা হলো, সেই রাতে মা ঘরজুড়ে মোমবাতি জ্বালিয়েছিল। বিটলসের গান বাজিয়ে ঘরের সবখানে সাজিয়ে রেখেছিল ওদের অ্যালবামগুলো। আরেকবার তাকে খুব বিচলিত হতে দেখেছিলাম, যেবার পোপ দ্বিতীয় জন পলকে গুলি করা হলো।মা মারা যাওয়ার পর, তার অভিনীত একটা শর্টফিল্মের ভিডিও খুঁজে পেয়েছিলাম। কী যে দারুণ অভিনয়! আমার মা চাইলেই সব করতে পারত।মারা যাওয়ার আগে মা আমাকে একটা কথা বলেছিল, স্বপ্ন নাকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকার বদলায়, এর ধারক-বাহক বদলায়। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নটা আসলে আমার নানির ছিল। একটা সময় মা সেটা ধারণ করতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সে প্রত্যাশা করত, একই স্বপ্ন আমার হবে। এখন উপলব্ধি করি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মেয়েরা তাদের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে বিলিয়ে দিতে থাকে। হয়তো কয়েক প্রজন্ম লাগে সেই একটা স্বপ্ন পূরণ করতে।এখন যখন আমি ‘উইন্টার’ গানটা শুনি, বুঝতে পারি সেই দিনগুলোয় আমার মা কতটা নিঃসঙ্গ আর আতঙ্কে থাকত।আমি এখন জানি নিঃসঙ্গতা কাকে বলে। আমি জানি নিজের চাদর দিয়ে ভালোবাসার মানুষগুলোকে আগলে রাখার মানে। আর জানি, এই মানুষগুলোকে নিরাপদে-সুস্থ রাখার যে সামর্থ্য আজ আমার আছে, তার জন্য ঈশ্বরের কাছে কতটা কৃতজ্ঞ আমি।এই মা দিবসে আমি স্মরণ করছি আমার সঙ্গে দেখা হওয়া শরণার্থীশিবিরের মায়েদের। প্রত্যেক মা তাঁর সন্তানদের নিরাপদে ও পরম স্নেহে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েই মাতৃত্বের যাত্রা শুরু করেন। এমনকি নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও। শরণার্থী মায়েদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, মায়েরা পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের চামড়া নরম, মোলায়েম হতে পারে। তবে সেটা নিতান্তই বাহ্যিক ব্যাপার। তাদের শক্তির উৎস ভালোবাসা আর সততা। মায়েরা যত সমস্যার সমাধান করে, পৃথিবীর কেউ এত সমস্যার সমাধান জানে না, করতে পারে না। মায়ের ভালোবাসার চেয়ে বিশুদ্ধ পৃথিবীতে আর কিছু নেই, সে ভালোবাসে আত্মা দিয়ে।

তাই যে মায়েরা আজ অসহায় বোধ করছেন, এরপরও শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে, পাতে থাকা শেষ খাবারটুকু দিয়ে, গায়ের একটা মাত্র চাদর দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখছেন—আপনাদের আমি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই।আর যারা আজ মা দিবসে শোক আর কষ্ট নিয়ে কাটাচ্ছ, আশা করব, তোমরা সান্ত্বনা আর শক্তি খুঁজে পাবে মায়ের সঙ্গে থাকা স্মৃতিগুলো থেকে। মায়ের স্মৃতি হোক শক্তির উৎস।

সম্পর্কিত নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button