
জান্তা নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারে ঔপনিবেশিক আমলের আইনে দুজন সাংবাদিককে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন একটি সামরিক আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে উসকানি দেওয়া ও ভুয়া সংবাদ প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে আজ বৃহস্পতিবার বলা হয়, মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় মায়েক শহরের সামরিক আদালত বুধবার সাংবাদিক অং খিয়াও এবং জাও জাওকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। খিয়াও সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা (ডিভিবি) এবং জাও মিজিমার সাংবাদিক।চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। পরে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ে তুমুল বিক্ষোভ। বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ ও প্রচার করতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন ওই দুই সাংবাদিক। খিয়াও আটক হওয়ার আগমুহূর্তে বিক্ষোভের খবর সরাসরি সম্প্রচার করছিলেন।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর খড়্গ চালাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। ডিভিবি, মিজিমাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের লাইসেন্সও ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ দমনের নানা উপায় বেছে নিয়েছে জান্তা। এ ছাড়া সাংবাদিকদের বিচারে ঔপনিবেশিক আমলের একটি দমনমূলক আইন সক্রিয় করেছে সরকার।ডিভিবির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে সাংবাদিক খিয়াওয়ের মুক্তি দাবি করে বলা হয়েছে, জান্তা অবৈধভাবে তাঁকে আটকে রেখেছে। এটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অন্যদিকে মিজিমা বলেছে, বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে জাওসহ প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ সাংবাদিক আটক হয়েছেন। তাঁদের মুক্তি দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।মিজিমা কর্তৃপক্ষ বলছে, মিজিমা পরিবার বিশ্বাস করে, সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা অপরাধ হতে পারে না। এ কারণে মিজিমাসহ মিয়ানমারের সব সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত।এদিকে দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ডের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংগঠনটি বলছে, জান্তা নিয়ন্ত্রিত আদালতের এ রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলেছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে জান্তার গুলিতে ৮৪১ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
এদিকে আসিয়ান মনিটরিং গ্রুপের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, জান্তাবিরোধী বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মিয়ানমারে ৮৭ জন সাংবাদিককে আটক হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন এখনো বন্দী রয়েছেন। আটক বা গ্রেপ্তার হওয়া থেকে বাদ যাননি বিদেশি সাংবাদিকেরাও। সাংবাদিকতায় যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দুজন নাগরিককেও আটক করেছে জান্তা সরকার।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সেনা অভ্যুত্থানের পর রেডক্রস প্রধান পিটার ম্যুয়েরারই হলেন প্রথম কোনো জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, যিনি মিয়ানমার সফর করছেন।