এশিয়াকোভিড-১৯বিশ্বভারত

ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ হতে পারে ভয়ংকর

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতোই মারাত্মক হতে পারে তৃতীয় ঢেউ। তা চলতে পারে টানা ৯৮ দিন। রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) সর্বশেষ ‘ইকোর‌্যাপ’ প্রতিবেদনে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। কোভিড মহামারির সময় অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এসবিআই এ প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তৃতীয় ঢেউয়ে বেশি আক্রান্ত হতে পারে কিশোর-কিশোরীরা। তাই ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতে এই বয়সী কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ১৫ থেকে ১৭ কোটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক হারে টিকা দেওয়া ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ঘটিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া যায়। সেই ভাবে কাজ করে মারাত্মক সংক্রমণের হার যদি ২০ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা যায়, তা হলে তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে। তা না হলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো মৃত্যু ১ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত কঠোর ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছেন, টিকাদানের জন্য গত বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দাখিল করতে। ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকার পূর্ণ দায়ও কেন্দ্রের হাতে থাকা উচিত বলে সর্বোচ্চ আদালতের অভিমত। কেন্দ্রীয় টিকা নীতি ‘খামখেয়ালি’ ও ‘অযৌক্তিক’ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, কোন টিকার কত ও কবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, কবে তা হাতে আসবে, শহর ও গ্রামের কত মানুষ টিকা পেয়েছেন, বাকিরা কবে পাবেন, কীভাবে পাবেন সমস্ত হিসাব সরকারকে জমা দিতে হবে। টিকা নীতি কীভাবে গৃহীত হয়েছে, সেসব নির্দেশসহ প্রয়োজনীয় তথ্যও সুপ্রিম কোর্ট জমা দিতে বলেছেন।

স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা রুজু করার মাধ্যমে এখনো পর্যন্ত যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে স্পষ্ট, বিচারপতিরা মনে করেন দেশের সব নাগরিককে টিকা দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারেরই হওয়া উচিত। এসব দাবি বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলো থেকেও উঠতে শুরু করেছে। টিকানীতি নিয়ে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাবতীয় তথ্য জমা দিতে হবে ৩০ জুনের মধ্যে।

গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পরের দিন বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্টও এক পৃথক শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে জানান, টিকা উৎপাদন ও সরবরাহে বিলম্বের জন্য যেসব সরকারি কর্তা দায়ী, তাঁদের ‘নরহত্যাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে মামলা করা দরকার। কারণ, সরকারি নিয়মনীতির জালে আটকে গোটা প্রক্রিয়ায় তাঁরা বিলম্ব ঘটাচ্ছেন। প্রবল চাহিদা সত্ত্বেও টিকা উৎপাদন সংস্থাগুলোর ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার তাঁরা করছেন না। সুপ্রিম কোর্টের মতো দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিরাও টিকানীতির সমালোচনা করে কেন্দ্রের কাছে জানতে চান, টিকার অভাবে মৃত্যুর ঘটনাকে সরকার কীভাবে ব্যাখ্যা করবে। বিচারপতিদের স্পষ্ট অভিমত, টিকা উৎপাদন ও জোগানের দীর্ঘসূত্রতা সরকারকে বন্ধ করতেই হবে।

টিকাকরণের হার দ্রুত বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা কেন্দ্রও স্বীকার করছে। সে জন্য একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল ছাড়াই ফাইজার ও মডার্নার টিকা বাজারজাত করার প্রক্রিয়ায় সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার টিকা ‘স্পুতনিক ভি’র উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে সরকার সবাইকে টিকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। সেই লক্ষ্যে হায়দরাবাদের সংস্থা বায়োলজিক্যাল-ইকে ৩০ কোটি টিকা উৎপাদনের বরাদ্দ দিয়েছে। সে জন্য অগ্রিম হিসেবে দেওয়া হয়েছে দেড় হাজার কোটি রুপি। বর্তমানে এই টিকার মানবদেহে পরীক্ষার তৃতীয় ট্রায়াল চলছে। বায়োলজিক্যাল-ইর তৈরি টিকা হবে হায়দরাবাদ বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন’-এর মতোই শতভাগ ভারতীয়।

 

সম্পর্কিত নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button