পাকিস্তানি ধারাবাহিকে রবীন্দ্রসংগীত, সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই নানাভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তানি ভাবাদর্শের পরিপন্থী—এই ধুয়া তুলে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল তাদের এদেশীয় দোসররা। আর সেটা রুখতে রীতিমতো আন্দোলনে নেমেছিলেন আমাদের সংস্কৃতিকর্মীরা। স্বাধীনতাযুদ্ধকালে রবীন্দ্রনাথের ছবি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর মতো ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস, সেই ঘটনার প্রায় ৬০ বছর পর পাকিস্তানের একটি ধারাবাহিকে শোনা গেল ‘নিষিদ্ধ’ রবীন্দ্রনাথের গান। ‘দিল কেয়া করে’ নামের সেই ধারাবাহিকের বিশেষ ওই দৃশ্যটি এখন ঘুরছে ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে, টুইটারে।
দিল কেয়া করে’ পাকিস্তানের জনপ্রিয় সিরিজ। নাটকের একটি দৃশ্যে প্রধান চার চরিত্রকে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করতে দেখা যায়। একসময় গল্পের প্রয়োজনে একটি নারী চরিত্রের মুখে শোনা যায় ‘আমার পরান যাহা চায়’। দেখা যায়, মুগ্ধ শ্রোতার মতো গানটি শুনছেন নাটকের বাকি পাত্রপাত্রী। ২০১৯ সালে প্রচার হয় ‘দিল কেয়া করে’।
দুই বছর পর কেন তাহলে এই আলোচনা? কারণ, দৃশ্যটি রবীন্দ্রভক্তদের নজরে এসেছে ইদানীং। নাটকটির পাকিস্তানি পরিচালক মেহরীন জব্বার সাদাকালো ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে পোস্টে লিখেছিলেন, ‘শর্বরী দেশপাণ্ডে গানটি গেয়েছিলেন।’ শর্বরী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভারতীয় শিল্পী।
পাকিস্তানি কোনো নাটকের চরিত্রের মুখে রবীন্দ্রসংগীত মনে হয় এই প্রথম। এক মিনিট দুই সেকেন্ডের এই ভিডিও আলাদা করে ইউটিউবেও আপলোড করা হয়েছে। সেখানে পুলক রায় নামের একজন মন্তব্য করেছেন, একজন পাকিস্তানির মুখে গানটি শুনে বারবার মুগ্ধ হচ্ছি। দেবযানী গোস্বামী মন্তব্য করেছেন, অসাধারণ গেয়েছেন। রবীন্দ্রসংগীত যেমনটি করে গাওয়া হয় ঠিক তেমনি, পারফেক্ট মনে হলো। অনেক অনেক ভালোবাসা।
দু-একজন অবশ্য বিরূপ মন্তব্যও করেছেন। একজন লিখেছেন, যে বাংলা ভাষা নিয়ে পাকিস্তান ভাগ হলো, ন্যাকামো করে এখন সেই ভাষাই ব্যবহার করছে। এমন মন্তব্যের জবাবে কেউ আবার লিখেছেন, সংগীতের কোনো দেশ নেই। এটাকে ন্যাকামো বলা ঠিক নয়। এটাকে ছোট করে দেখাও ঠিক নয়।
২০১৯ সালে প্রচারের সময়ই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে ‘দিল কেয়া করে’। নাটকে আরমান ও সাদী ভালো বন্ধু। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসে আইমান। সে আরমানের প্রেমে পড়ে। সাদীও আরমানকে একটু একটু করে পছন্দ করতে থাকে। আরমানকে নিয়ে আইমান ও সাদীর টানাপোড়েন নিয়েই ‘দিল কেয়া করে’।