‘জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ ব্যর্থ হলে সভ্যতা ধ্বংস হবে’

নন্দন নিউজ ডেস্ক: জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে বৈশ্বিক সভ্যতার দ্রুত পতন হবে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ অগ্রগতি না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষুধা, সংঘাত এবং গণ-অভিবাসনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। রোমে শুরু জি-২০ সম্মেলনে এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর নেতারা ইতালির রোমের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তাদের এবারের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলার বিষয়টি। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথমবারের মতো জি-২০ নেতারা রোমে মুখোমুখি হলেন। তবে এবারের সম্মেলনে সরাসরি যোগ দেননি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারা ভার্চ্যুয়ালি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
কার্বন নির্গমন কমাতে জরুরি পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি বিষয়ে সতর্কবার্তার মধ্যেই এবারের জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বের ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিলে গড়া জি-২০ গ্রুপকে বিশ্বের ৮০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী করা হয়।
দুই দিনের জি-২০ সম্মেলন শুরুর আগে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘প্রস্তাবিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে আমাদের সভ্যতা পিছিয়ে যাবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছি, যার সঙ্গে আমরা কোনো দিন একমত হতে পারব না।’তবে বরিস জনসন স্বীকার করেন, জি-২০ সম্মেলন বা সোমবার শুরু হতে যাওয়া গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলন কোনোটিই বৈশ্বিক উষ্ণতা ঠেকাতে পারবে না। আমরা সর্বোচ্চ আশা করতে পারি বৈশ্বিক উষ্ণতার গতি কমিয়ে আনার বিষয়টিতে।শুক্রবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের যেভাবে দ্রুত পতন হয়েছিল, বৈশ্বিক সভ্যতা সেভাবেই ভেঙে পড়বে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন- তার ধারণা গ্লাসগোতে জাতিসংঘের কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের সফল হওয়ার সম্ভাবনা ১০-এর মধ্যে ৬ ভাগ। সোমবার গ্লাসগোতে শুরু হতে যাওয়া ওই সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ও ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
রোমে জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়ে জনসন বলেছেন, ‘কপ-২৬ সম্মেলনে আমাদের নেতাদের একসঙ্গে বসে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, জি-২০ নেতারা একটি খসড়া বিবৃতিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তবে খসড়ায় থাকা শর্ত মানতে দেশগুলোর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ওই খসড়ায় অবৈধ বনাঞ্চল ধ্বংস, খনন এবং বন্য প্রাণী ব্যবসা বন্ধ করার জন্য বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বিশ্বনেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, জি-২০ নেতাদের মধ্যে নতুন করে আস্থা সৃষ্টি না হলে গ্লাসগোতে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন ব্যর্থ হতে পারে। তিনি আরও বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও পদক্ষেপ নিতে দেশগুলোর নেতাদের কাছে আহ্বান জানান।