
নন্দন নিউজ ডেস্ক: ইসরাইলের মতো পৃথিবী থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্নের দিনই একজনের দেহে ওমিক্রন শনাক্তের ঘোষণা দিয়েছে জাপান। এর ফলে ওমিক্রন শনাক্ত দেশের সংখ্যা ১৮-এ গিয়ে দাঁড়াল। নেদারল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ বা আরআইভিএম বলেছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় গত বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) শনাক্তের আরো আগে গত ১৯ এবং ২৩ নভেম্বর সংগ্রহ করা দু’টি নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছেন। তবে এ দুই ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছিলেন কি-না তা এখনও পরিষ্কার নয়। উত্তর আমেরিকায় শনাক্ত হওয়া উদ্বেগের, তবে ভীতির কারণ নয় বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি এখনই লকডাইনের মতো সিদ্ধান্তের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন না বলে জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসন (টিএসএ) গত রোববার একদিনে ২৪ লাখ ৫০ হাজার বিমানযাত্রীর করোনা পরীক্ষা করেছে, যা কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দৈনিক যাত্রী পরীক্ষার সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা ভারতীয় একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন যে, ওমিক্রনের উপযোগী বুস্টার ডোজ তৈরি করা সম্ভব।
এবার জাপানে ওমিক্রন; সীমান্ত বন্ধ, বিদেশিরা নিষিদ্ধ জাপানে, নামিবিয়াফেরত এক বিমানযাত্রীর দেহে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এটিই জাপানে শনাক্ত হওয়া ওমিক্রনের প্রথম কেস বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদসচিব হিরোকাজু মাতসুনো সাংবাদিকদের বলেন, ৩০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে বিমানবন্দরে পরীক্ষা করা হলে তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, তাকে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সরকার তার ঘনিষ্ঠদের বিষয়ে সতর্ক এবং নিয়মিত খোঁজ রাখছে। এদিকে গতকাল থেকে জাপান তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিদেশিদের সে দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী এক মাস বলবৎ থাকবে বলে জানা গেছে। ওমিক্রনের প্রবেশ বন্ধ করার জন্য এটি বিশ্বে কঠোরতম ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তসহ অন্যান্য যাত্রীদের নিয়ে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দু’টি ফ্লাইট আসার আগেই নেদারল্যান্ডসে এ ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বলে ডাচ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ (আরআইভিএম) বলেছে, গত ২৬ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ এবং কেপটাউন থেকে আমস্টারডামের শিফল বিমানবন্দরে আসা দু’টি ফ্লাইটের অন্তত ১৪ জন আরোহী করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি বহন করে নিয়ে এসেছেন। আরআইভিএম বলেছে, ‘কিন্তু আমরা তারও আগে গত ১৯ এবং ২৩ নভেম্বর সংগ্রহ করা দু’টি নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। তবে এই দুই ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছিলেন কি-না তা এখনও পরিষ্কার নয়।’ গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। একই সঙ্গে ওমিক্রনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সংস্থাটি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়ার ৬ দিন আগের নমুনায় নেদারল্যান্ডস ‘ওমিক্রন’ সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে বলে মঙ্গলবার আরআইভিএম জানিয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ বলছে, ওই দুই ব্যক্তির নমুনায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর লোকজনকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং পৌর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এখন কন্টাক্ট ট্রেসিং শুরু করেছে। আরআইভিএম বলেছে, আগামী দিনে নেদারল্যান্ডসে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ওপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা পরিচালিত হবে। আগের নমুনাগুলোও পুনরায় পরীক্ষা করা হবে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসেই সর্বোচ্চ ১৬ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডসে আসা দু’টি ফ্লাইটের ৬১ জন যাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়েছিল; তাদের মধ্যে কয়েকজন ওমিক্রন আক্রান্ত। বর্তমানে তারা আমস্টারডামে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। ওমিক্রনের বুস্টার ডোজ আনা সম্ভব: আদর পুনাওয়ালা বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের উপযোগী বুস্টার ডোজ তৈরি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনাওয়ালা। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এই প্রধান নির্বাহী মঙ্গলবার দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গবেষণায় যদি এ ধরনের শটের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাহলে কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের জন্য কোভিশিল্ড টিকার একটি সংস্করণ তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। ওমিক্রনের টিকার পরীক্ষা চলছে এবং আরও দুই সপ্তাহ পরে নতুন ভাইরাস সম্পর্কে জানা যাবে।
সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার এই প্রধান নির্বাহী বলেছে, অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরাও তাদের গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন এবং তাদের গবেষণার ফলের ওপর ভিত্তি করে আমরা নতুন একটি ভ্যাকসিন আনতে পারি; যা ছয় মাসের জন্য বুস্টার হিসেবে কাজ করতে পারে। ‘গবেষণার ওপর ভিত্তি করে আমরা সবার জন্য তৃতীয় এবং চতুর্থ ডোজ সম্পর্কে জানতে পারব,’ বলে এনডিটিভিকে জানিয়েছেন আদর পুনাওয়ালা। তবে ওমিক্রনের জন্য ভ্যাকসিনের একটি নির্দিষ্ট সংস্করণের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন তিনি।
নতুন একটি গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, ল্যানসেট সাময়িকীতে বলা হয়েছে, কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা অনেক বেশি এবং এটি হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস করে। কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা সময়ের সাথে সাথে কমে যাবে এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোম্পানির কাছে পর্যাপ্ত ডোজ মজুদ আছে এবং যদি বুস্টারের প্রয়োজনও হয়, তাহলে এটি একই দামে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।